সরোবরে জলবন্দী
- আর এম উৎস ০৭-০৫-২০২৪

(প্রেক্ষাপটঃ সাগরে ভাসমান বাঙালি ও রোহিঙ্গা ভাইদের দুরবস্থা)

আর কত দোলে দোলাবি এ নাও, ওরে সরোবর শান্ত হ,
টুকরো জনম জলে গেলো, তুই এবার না হয় ক্লান্ত হ।
ধীর বাতাসেও কলিজার গায়ে, শিউরে উঠছে দগ্ধ লোম,
ক্ষুধা তিয়াসার হা-হুতাশ, যেন মৃত্যুতে আজ সুখ পরম।
ওরে সরোবর দোলাস না আর, থমকে দে আজ বাতাস তোর
নিয়ে চল্‌ পাড়ে ডাঙার কিনারে প্রিয়ভূমে রাখি কদমজোড়।
আর কত দোলে দোলাবি এ নাও! সরোবর তুই শান্ত হ।

সুফলা জননী কত না যতনে, পিঞ্জরে দিত খাদ্য রোজ,
সুজলা সায়রে ঝাপ দিয়ে বুঝি ক্ষুধার তাড়না, ব্যথার ভোজ।
ওরা যারা দিলো এই নাওয়ে তুলে, তারাই তবে কি ইন্দ্রজিৎ?
বিশ্বাসও আর নিচ্ছে না শ্বাস, নড়বড়ে তার ভিত্তি ভিত্‌।
পাড়ে যাবো ওরে আরেকটিবার, ওরে সরোবর তুফান তোল্‌।
মমতার মায়া বুঝবো সত্যি, আঁকড়ে রাখবো মায়ের কোল্‌।
আর দোলাস না দোদুল্যমান, লক্ষ্মী জলধি, ক্লান্ত হ,
একটু খানিক শান্ত হ।

আজ চাহিদারা অন্ন, বস্ত্র, শুশ্রূষা আর শিক্ষাহীন,
গৃহ চাওয়া যেন নির্লজ্জতা, জননীর কাছে কপট ঋণ।
বরণ করে না কোন মাটি আজ কোন কূলে আর পাই না ঠাই,
জননী কি তবে অভিশাপ দিলো? মধ্য সায়রে আটকে তাই?
ডাঙার দেবতা নির্দয় এতো? এতো বুঝি তার ক্রোধের ক্ষোভ?
তাঁর কি বা দোষ? অথৈ এ জল! এ যেন আমারই স্বার্থ লোভ।
ত্রুটি বিচ্যুতি সবটুকু ভুল করবো সমাধি সলিলে তাই ,
সরোবরে আজ অসহায় এত, ওই সলিলেই মিলিয়ে যাই ।
সরোবর তুই শান্ত হ, একটু এবার ক্লান্ত হ।

এত শত জোড়া অশ্রু অধরা, রোনাজারি যেন অর্থহীন,
নিজ মাটি পেতে শক্ত শ্রমিক, কান্নায় ধরে সাপের বীণ।
নাই আজ কাছে মসজিদ কোন, নাই দেবতারা মন্দিরে,
বিধাতার দয়া দিচ্ছে না দেখা এত শত জলবন্দীরে।
দ্বিধার পাহাড়ে ডাঙার স্বামীরা, খুঁজছে আমার বৈধতা!
জন্মের কালে সেও ঢের ছিল, মৃত্যু তবে কি অন্যথা?
নয়নের জল, তোরা পরাজিত, তোরাই নাহয় শান্ত হ,
জিতে গেলি তুই, ওরে সরোবর, হরষে হন্তদন্ত হ।
আঁখিজল তুই শান্ত হ, আঁখিজল তুই ক্লান্ত হ।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।